সোঁয়াই গ্রামে মুখোপাধ্যায় বাড়ির মহামায়া


সোঁয়াই গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়িতে বিরাজমান মহামায়া। কথিতে আছে, তাদের বাড়ির দেবীকে পথ ছেড়ে দিয়েছিলেন বর্ধমানের মহারাজা। আছে বলি প্রথার প্রচলন। প্রায় ৩৩০ বছর আগে এই পুজোর সূচনা করেন বাসুদেব মুখার্জি। জানা যায়, এই গ্রামেই ছিলো টোল অর্থাৎ পাঠশালা। আর এই টোলেই শিক্ষা নিতে আসেন মুখার্জি বাড়ির পূর্বপুরুষ বাসুদেব মুখার্জি । পড়াশোনার সাথে সাথেই এই গ্রামের মেয়ের সাথে তার বিয়ে হলে পরবর্তীতে এই গ্রামেই বসবাস শুরু করেন তিনি।বাসুদেব মুখার্জির আদি বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের বাকলসার গ্রামে। সেখানে তার বাড়িতে দুর্গাপুজো হতো। তিনি যখন সোঁয়াই গ্রামে বসবাস শুরু করলেন তখন বাধ্যহয়ে নিজের বাড়ি থেকে দেবীকে নিয়ে আসেন সোঁয়াই গ্রামে। কিন্তু সেই সময় রাস্তাতেই ঘটে যায় এক অলৌকিক ঘটনা। দেবীকে যখন তিনি কাঁধে করে নিয়ে আসছিলেন সেই সময় তৎকালীন বর্ধমানরাজা তার সৈন্য নিয়ে ভ্রমণে বের হন। রাস্তায় মুখোমুখি হয় রাজার সৈন্য ও দেবী। একদিকে সৈন্যরা বলেন তারা রাস্তা ছাড়বে না অপর দিকে যারা দেবীকে কাঁধে করে নিয়ে আসছিলেন তারাও কোনো ভাবেই রাস্তা ছাড়তে চাননি। অগত্যা দেরি দেখে রাজা নিজেই মীমাংসা করতে এগিয়ে এলে তিনি বুঝতে পারেন দেবীর মাহাত্ম্য। দেবীকের রাস্তা ছেড়ে দেন বর্ধমানের মহারাজা। শাক্ত মতে এখানে মহিষাসুরমর্দিনীর পুজো করা হয়। বেল্লী বরণ, দোলা আনা, ছাগ বলি থেকে কুমারী পুজো সমস্তটাই হয় চিরাচরিতার নিয়ম বিধি মেনেই।আগে এখানে দুটি মোষ বলি হলেও কোনএক সময় গলায় দড়ির ফাঁস লেগে মারা যায় একটি মোষ সেইথেকে দুটির বদলে একটি করে মোষ বলি হয় এখানে। তবে পরিবার সূত্রে জানা যায়, মোষ বলি বন্ধ করতে উদ্যোগী হয় ইংরেজরা। পরাধীন ভারতবর্ষের সেই সময় তৎকালীন জেলা শাসককে দিয়ে বলি প্রথা বন্ধ করার চেষ্টা করলে জেলাশাসক এসে বলি প্রথা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে যান। কিন্তু স্বপ্নাদেশের পরই পুজোর সময় এসে তিনি পুনরায় বলি চালু করতে বলে যান। তিনি বলেন, রাতে তার ঘুম হতো না সব সময় নানান দু:স্বপ্ন দেখতেন তিনি। মনে হতো কেউ ত্রিশূল নিয়ে তাকে মারতে উদ্যত হচ্ছে। এরপরেই দেবী মাহাত্ম্য বুঝতে পারেন তিনি। মুখার্জি বাড়ির সদস্যরা জানান, পুজোর কয়েকটা দিন যে যেখানেই থাকুক সবাই এসে সামিল হয় পুজোতে।পুজোর সময় বাড়ির মহিলারা কোথাও বের হন না ঠাকুর দেখতে। বাড়িতেই সকলে মিলে আনন্দে কাটান পুজোর চারটে দিন। তবে এই পুজোতে এখন শুধু মুখার্জি পরিবার নয়, গোটা গ্রামের মানুষজন যোগ দেন আনন্দ উৎসবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *